ঢাকা,রোববার, ১৯ মে ২০২৪

ফাইতংয়ে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করে হুমকিতে বাদি পরিবার

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::  ফাইতংয়ে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে মামলা দায়ের করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিপক্ষের লোকজন বাদী ও পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ধর্ষিতার পরিবার চরম আতঙ্কে ভুগছেন। ঘটনার বিষয়ে আইনের দুয়ারে ঘুরে ফিরলেও কোন ধরণের প্রতিকার মিলছে না বলে চকরিয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে দাবী তুলেছেন আক্রান্ত ছাত্রীর পরিবার।

অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, চকরিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী ফাইতং ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডস্থ সুতাবাদি এলাকায় ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ছাত্রী গত ২২অক্টোবর ওই এলাকার বখাটে যুবকের কাছে জোরপুর্বক ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় আক্রান্ত ছাত্রী নিজে বাদী হয়ে ফাইতং সুতাবাদি এলাকার ইব্রাহিম প্রকাশ ইসরাফিলের ছেলে ধর্ষক যুবক মোঃ তারেকের বিরুদ্ধে বান্দরবান জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল জজ আদালতে গত ৩০ নভেম্বর একটি মামলা দায়ের করেন। বাদিপক্ষের অভিযোগ, মামলার পর থেকে অভিযুক্ত যুবক ও তার পরিবারের সদস্যরা মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে।

ভিকটিমের দেয়া ভাষ্যমতে জানা গেছে, আক্রান্ত ছাত্রীর বাবা দিনমজুর হিসেবে বিভিন্ন স্থানে কাজ করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন। হঠাৎ করে মা অসুস্থ হওয়ার কারণে তার বাবা মা’কে নিয়ে চট্টগ্রামে চিকিৎসা করতে যায়। তার ছোট দুই বোনকে নিয়ে বাড়িতে ছিল জেসমিন। ঘটনার দিন তাদের বাড়িতে বাবা-মা অনুপস্থিত থাকায় এমন সময়ে স্থানীয় বখাটে যুবক তারেক এসে জিজ্ঞাস করে তোমার মা কোথায় বলে বসতঘরে ঢুকে পড়ে। এসময় বখাটে তারেকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে চলে যাওয়ার সময় কাহাকে কিছুই না বলার জন্য হুমকি দেন।

আক্রান্ত্র ওই ছাত্রীর মা জানান, ঘটনার রাতে চিকিৎসা শেষে আমি চট্রগ্রাম শহর থেকে বাড়ি ফিরলে মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় বাড়িতে পড়ে থাকতে দেখে তার বাবাকে ডাক্তার নিয়ে ঘরে আসতে বলি। মেয়ের জ্ঞান ফেরার পর ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে অভিযুক্ত তারেকের মা এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য জোবায়ের মেম্বারকে বিষয়টি অবহিত করি। তাঁরা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করার আশ্বাস প্রদান করেন। এমনকি ওইসময় মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষাসহ মামলা না করার জন্য বাঁধা প্রদান করেন।

এভাবে স্থানীয় বিচারকরা এক মাস ধরে কালক্ষেপন করতে থাকেন। এতে নিরুপায় হয়ে গত ৩০ নভেম্বর আমার আক্রান্ত মেয়ে নিজে বাদী হয়ে বান্দরবান জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল জজ আদালতে মামলা রুজু করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দিতে লামা থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জোবায়ের বলেন, অভিযোগকারীর পরিবার থেকে ঘটনার ব্যাপারে আমাকে কোন ধরণের অবহিত করা হয়নি। তবে বিষয়টি এলাকার অন্যান্য লোকের মাধ্যমে শুনেছি।

ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই ছাত্রী নিয়মিত স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় হঠাৎ তার বাড়ির সাথে যোগাযোগ করলে ঘটনা সম্পর্কে আমাকে অবগত করে। ঘটনার পর থেকে সে স্কুলে আসা থেকে বিরত থাকেন। আমি উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাই।

জানতে চাইলে মুঠোফোনে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরে জন্নাত রুমি বলেন, স্কুলছাত্রী ধর্ষণ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ আমি পাইনি। তবে বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম মাত্র। ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে অভিযুক্তকে ছাড় দেয়া হবে না, তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: